বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিকল্পিত সৌন্দর্য বিনষ্ট করে অপরিকল্পিতভাবে একটি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (এইচইডি)। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসের অন্যত্র ওই ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, ৩ বছর আগে এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে হাসপাতালের মূল ভবনের সৌন্দর্য ব্যহত হবে। হাসপাতালের মূল ভবনের জরুরী বিভাগের সামনে অপরিকল্পিত ভবন নির্মানের বিরোধীতা করেন স্বয়ং হাসপাতালের পরিচালক। তবে হাসপাতাল ভবনের সামনে ৫ তলা ভবন নির্মাণের কারণে মূল ভবনের কোন সৌন্দর্যহানী হবে না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। প্রায় ৭০ একর আয়তনের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ভবন, ১টি একাডেমিক ভবন, ৩টি ছাত্রাবাস, ২টি ছাত্রী নিবাস, ২টি ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেল, ১টি নার্সিং কলেজ, ১টি নার্সিং ছাত্রীনিবাস, ১টি নার্সিং ছাত্রাবাস, ১টি ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবন, ২টি ছাত্রাবাস ও ১টি ছাত্রীনিবাস, আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট একটি নতুন বর্ধিত হাসপাতাল ভবন (করোনা ওয়ার্ড), ১টি মসজিদ, ১টি জিমনেশিয়াম, খেলার মাঠ এবং ডাক্তার ও কর্মচারীদের কোয়ার্টার রয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের সবগুলো অবকাঠামো পরিকল্পিত এবং নান্দনিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের কোন পরামর্শ না নিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ মেডিকেলের মূল ভবনের জরুরী বিভাগের সামনে ৫ তলা পাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। ৮৩ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ৫৫ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট ৫তলা ভবনে থাকছে পুরুষ ও মহিলা ডরমেটরী, পুরুষ ও মহিলা জিমনেশিয়াম, স্যুট, পার্কিং, গার্ডেনিং, ফার্মেসী এবং ফুটপাত। এই ভবন নির্মানে বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এতে বাঁধ সেঁধেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। তারা হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে অপরিকল্পিতভাবে মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উদীচী বরিশালের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিকল্পিত নকশায় এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। সেখানে মেডিকেলের মূল ভবনের সৌন্দর্যহানী করে জরুরী বিভাগের সামনে ৫তলা ডরমেটরি ও জিমনেশিয়াম ভবন নির্মাণ গ্রহণযোগ্য নয়। বরিশাল ইতিহাস ঐহিত্য ও সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অনেক জায়গা খালী আছে। সেসব জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ না করে জরুরী বিভাগের সামনে নতুন ভবন নির্মাণ অযৌক্তিক। স্থানীয় সুশীল মানুষ মেডিকেল ভবনের সৌন্দর্যহানীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে জানান শিবুল। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ৩ বছর আগে যখন মেডিকেল ক্যাম্পাসে একটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। হাসপাতালের মূল ভবনের জরুরী বিভাগের সামনে নতুন একটি ৫তলা ভবন নির্মিত হলে মূল ভবনের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। তিনি নিজেও ওই স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের বিপক্ষে বলে জানান পরিচালক। এইচইডি’র সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮৩ ফুট দির্ঘ এবং ৫৫ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবনটি মেডিকেলের সামনে নয়, জরুরী বিভাগের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল ভবন এবং বান্দ রোড থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট, পাইল টেস্ট এবং লোড টেস্ট করা হয়েছে। এখন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল (এইচইডি) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইছাহাক মিয়া বলেন, তৎকালীন মেডিকেল কর্তৃপক্ষ যেখানে স্থান নির্ধারন করে দিয়েছে সেখানেই মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন যদি কোন বাঁধা আসে তাহলে সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
Leave a Reply